অভিবাসনের দিকটি দীর্ঘদিন ধরেই জাপানিদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। তারা স্থানীয় নৃতাত্ত্বিক আধিপত্যে বিশ্বাসী। তবে দেশটিতে বয়স্ক শ্রেণির সংখ্যা বেশি থাকায় কমছে জনসংখ্যা। ফলে প্রতিনিয়ত শ্রম সংকট বেড়েই চলেছে। এই সংকটই চাপ ফেলছে সীমান্ত নীতিতে।
জাপানে অভিবাসী কর্মীদের জন্য প্রবেশের সুযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল সীমিত। তবে এই নীতিতে আসছে বড় পরিবর্তন। শ্রমসাধ্য কাজে জড়িত অভিবাসী কর্মীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানে থাকতে পারবেন। আনতে পারবেন পরিবারের সদস্যদেরও।
সুর্যোদয়ের দেশটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকেই নতুন এ নিয়ম চালু করবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) জাপানের বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে ২০১৯ সালে পাস হওয়া এক আইনে কৃষি, নার্সিং কেয়ার এবং স্যানিটেশনের মতো ১৪টি খাতে “নির্দিষ্টভাবে দক্ষ শ্রমিক”দের সেদেশে অবস্থানের ভিসা অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে সেই ভিসার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। অবকাঠামো ও জাহাজ নির্মাণ খাত ছাড়া অন্যান্য খাতে ছিল না শ্রমিকদের নিজ পরিবারের সদস্যদের জাপানে নিয়ে আসার সুযোগ।
এসব সীমাবদ্ধতার কারণে জাপানি কোম্পানিগুলোও কায়িক শ্রমঘন কাজে অভিবাসী শ্রমিক পেতে সমস্যার মধ্যে পড়তো। বিষয়টি উপলদ্ধি করে জাপান সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করার উপায় খুঁজছিল।
এরপরই জানা গেল সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কথা, যা জাপানের কঠোর অভিবাসন নীতির নাটকীয় দিক-পরিবর্তন।
এই পরিবর্তন কার্যকর হলে, অধিক আয়ের জন্য ভিয়েতনাম ও চীনের মতো এশীয় দেশ থেকে আসা কর্মীরা তাদের ভিসা অনির্দিষ্টকালের জন্য নবায়ন করিয়ে থাকতে পারবেন। আনতে পারবেন পরিবারের সদস্যদেরকেও।
তবে জাপান সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র হিরোকাজু মাতসুনো বলেন, নীতি পরিবর্তন মানেই স্থায়ী আবাসের সুযোগ নয়, এজন্য আলাদা আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
অভিবাসনের দিকটি দীর্ঘদিন ধরেই জাপানিদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। তারা স্থানীয় নৃতাত্ত্বিক আধিপত্যে বিশ্বাসী। তবে দেশটিতে বয়স্ক শ্রেণির সংখ্যা বেশি থাকায় কমছে জনসংখ্যা। ফলে প্রতিনিয়ত শ্রম সংকট বেড়েই চলেছে। এই সংকটই চাপ ফেলছে সীমান্ত নীতিতে।
এনিয়ে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জাপান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোশিরো মেনজু বলেন, “পড়তি জনসংখ্যা আমাদের জন্য বর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই বাস্তবতায় বিদেশি কর্মীদের জাপানে আসতে উৎসাহিত করতে চাইলে তাদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিতে হবে। তাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে, এখানে তাদের স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
জাপান সরকারের তথ্যানুসারে, এর আগে ২০১৯ সালের আইনের আওতায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু, এরপর মহামারি হানা দেওয়ায় প্রতি মাসে মাত্র ৩ হাজার শ্রমিক গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দীর্ঘদিন সীমান্তও বন্ধ রেখেছিল দেশটি।
২০২০ সালের শেষ নাগাদ জাপানে সাড়ে ১২ কোটি স্থানীয় জনসংখ্যার বিপরীতে মোট বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ২০ হাজার। যা কর্মক্ষম জনসংখ্যার মাত্র আড়াই শতাংশ।