সম্পাদকীয়
টানা বৃষ্টিতে কয়েক দিনের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ এ দেশে নতুন কিছু নয়। দেশের বড় শহরগুলোতেই এমন দৃশ্য দেখা যায়। আবার কোনো বন্যায় কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী জীবনও এ দেশের মানুষকে সইতে হয়। তাই বলে টানা দুই মাস ধরে এমন পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হবে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
ফরিদপুর পৌরসভার ব্রাহ্মণকান্দা এলাকার দেড় শতাধিক বাসিন্দাকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘরবাড়ি, সরকারি বিদ্যালয়, মসজিদের প্রাঙ্গণ—সবকিছু ডুবে আছে দিনের পর দিন। পানিনিষ্কাশনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জলাবদ্ধ এলাকাটির এক প্রান্তে পৌর এলাকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়। সেখানকার নজরুল মুন্সীর মনিহারি দোকান থেকে দক্ষিণ দিকে একটি লোকালয়ের দিকে ঢুকে যাওয়া মণ্ডলবাড়ি সড়ক।
দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই সড়কের ৫০০ মিটার অংশ পানিতে ডুবে আছে। এলাকাটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। মূলত পানি সরে যাওয়ার জন্য সড়কসংলগ্ন এলাকায় কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিন আগে তিন দিনের ভারী বর্ষণের ফলে সেখানে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
প্রতিবছর বৃষ্টির সময় এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে রয়েছে ওই এলাকার অন্তত ৩০টি পরিবার। কোনো বাড়ির ভেতরে পানি রয়েছে। কোনো কোনো বাড়ির উঠান এবং কোনো কোনো বাড়ির রান্নাঘর পানিতে ডুবে আছে। ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই মাস ধরে মাঠে অ্যাসেম্বলি হচ্ছে না। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৭ হলেও বর্তমানে হাজিরা নেমে এসেছে ৭০ থেকে ৮০ জনে। আগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭৫ শিক্ষার্থী স্কুলে হাজির হতো। সন্তানদের শিক্ষা নিয়েও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে।
শহর বা মফস্সলে যেখানেই হোক, যখন সড়ক করা হয়, ভেবে দেখা হয় না পরবর্তী সময়ে সেখানকার লোকালয়গুলোয় কী প্রভাব পড়তে পারে। ব্রাহ্মণকান্দা এলাকা তার একটি উদাহরণ হতে পারে। স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের ভাষ্য, ১০ বছর আগে বাইপাস সড়কটি হওয়ায় ওই এলাকা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের তিনটি পথ বন্ধ হয়ে যায়। আরেকটি পথ ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক। ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বারবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সমাধান পাননি। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পাইপ দিয়ে পানি অপসারণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘ দুই মাসেও এ সমস্যার সমাধান করতে না পারাটা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। এখন কি এতগুলো পরিবার এভাবেই পানিবন্দী জীবন কাটাবে?