ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বলে তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ)। তাই নির্বাচন কমিশনে শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) আব্দুল কাদের আজাদের পক্ষে তার আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে কমিশনের ৭ নম্বর বুথে (ফরিদপুর অঞ্চলে) এ আপিল আবেদন জমা দেন।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর শামীম হকের আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ)। একই সঙ্গে শামীম হকের মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফারুক হোসেনও।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদের আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। তথ্য উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ করা স্বত্বেও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল না করে বৈধ ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার এ আদেশের বিরুদ্ধে শুক্রবার আপিল করেছি।
এ আইনজীবী আরও বলেন বলেন, শামীম হকের নেদারল্যান্ডসের পূর্ববর্তী পাসপোর্ট নম্বরে জন্ম তারিখ ২১ অক্টোবর ১৯৬০ লেখা আছে। শামীম হক সম্প্রতি তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য ফরিদপুর পাসপোর্ট কার্যালয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের ২৫ নম্বর কলামে দ্বৈত নাগরিকত্বের ঘরে তিনি টিক মার্ক দিয়েছেন। ২৬ নম্বর কলামে অন্য দেশের নাগরিক থাকলে সেই দেশের নামের জায়গায় নেদারল্যান্ডস উল্লেখ আছে। ২৭ নম্বর কলামে তার বর্তমান নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করা আছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে শামীম হকের মনোনয়ন বাতিলের জন্য যুক্তি হিসেবে তার নেদারল্যান্ডের পাসপোর্টের ফটোকপি প্রমাণ স্বরুপ উপস্থাপন পূর্বক আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ এবং ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(১) (৬) অনুচ্ছেদের বিধান মতে শামীম হক একজন বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না, তিনি অযোগ্য প্রার্থী। এছাড়া তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (১২) (২)(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রদত্ত এফিডেভিটে বিষয়টি গোপন করায় তার ঘোষণাটি মিথ্যা বলে বিবেচিত হবে এবং এ কারণেও তার মনোনয়ন বাতিল হওয়ার কথা। সংবিধানের ৬৬ (২) (গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি কোন বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদের অনুরূপ বিধানই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(১)(৬) অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত হয়েছে।
অন্যদিকে একই সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিক হওয়ার অভিযোগ এনে মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। উভয়ের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে দুই প্রার্থীকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দুজনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সত্য নয়। আমি বাংলাদেশের নাগরিক। অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব আমার নেই। আমি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদনও করিনি। বিদেশের কোনো ব্যাংকে আমার অ্যাকাউন্টও নেই।
তিনি আরও বলেন, শামীম হক নেদারল্যান্ডে থাকার সময় দীর্ঘদিন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এ পদে থাকতে হলে যেকোনো ব্যক্তিকে ওই দেশের নাগরিক হতে হয়। প্রবাস রাজনীতিতে দলীয় পদ পদবি পেতে হলে স্ব-স্ব দেশের ভোটার ও বৈধ নাগরিক হতে হয়।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক বলেন, আমি নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ছিলাম। কিছুদিন আগে সারেন্ডার করেছি। যাবতীয় কাগজপত্র আমার কাছে আছে। এখন আমি অন্য কোন দেশের নাগরিক নই। শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক আমি।
তিনি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে দ্বৈত নাগরিকদের নির্বাচন করার সুযোগ নেই বিষয়টি আমি জানতাম। এ কারণে আগে থেকেই নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছি।
নির্বাচনে অংশ নিতে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মোট আটজন প্রার্থী। যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচজনের মনোনয়ন বৈধ এবং এক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।
আসনটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত শামীম হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত এম এ মুঈদ হোসেন আরিফ, জাতীয় পার্টির এস এম ইয়াহিয়া ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. দেলোয়ার হোসেন।