রাশিয়ার সেনাদের দখলে থাকা ভূখণ্ডের পুনর্দখল নিতে গত জুনে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। তাদের বুদ্ধি–পরামর্শ ও সামরিক সহযোগিতা দিচ্ছিল মিত্ররা। তবে গ্রীষ্মে কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্য অর্জন তো সম্ভবই হয়নি, বরং শীত মৌসুম সামনে রেখে এখন আতঙ্কে তারা।
গত ছয় মাসে চমকে দেওয়ার মতো কোনো সাফল্য পায়নি ইউক্রেন বাহিনী। উল্টো রুশ সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অনেক প্রাণহানি ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি এ সময় রাশিয়া আরও সেনা নিয়োগ করায় নতুন করে চাপে পড়েছে তারা।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সেনা কমান্ড ১৫তম ন্যাশনাল গার্ডের এক কমান্ডার ইহোর (রূপক নাম)। তিনি বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীতে যেমনটা বলে থাকি, খাতা-কলমে পরিকল্পনাটা ছিল অনেক ভালো। কিন্তু আমরা (যুদ্ধক্ষেত্রের শত্রুসেনাদের) পরিখাগুলোর কথা মাথায় আনিনি।’
দক্ষিণ ইউক্রেনের প্রত্যন্ত এলাকার একটি সেনা ফাঁড়িতে বসে ইহোরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এ সময় রেডিও কক্ষে আতঙ্ক ছড়ায়। তাঁর উদ্দেশে চিৎকার করে অপারেটর বলছিলেন, ‘গুরুতর আহত’।
ইহোর দ্রুত ওয়াকিটকি হাতে নিয়ে বারবার বলতে থাকেন, ‘উদ্ধারকাজ শুরু করো। ছোট গাড়িতে করে উদ্ধার করে আনো। তোমরা কি ইতিমধ্যে সেখান থেকে সরে এসেছ?’ ওপাশ থেকে উত্তর আসে, সেনাদের উদ্ধার করে আনার মতো গাড়ি নেই। এ কথা শুনে ইহোর হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে মৃত্যুসংবাদ আসে। এরপর ইহোর বলেন, ‘প্রতিটি মৃত্যু (দুই পক্ষের মধ্যে) পার্থক্য গড়ে দেয়। এর প্রভাব পড়ে প্রত্যেকের মনে। আর আমার জন্য এটা তো খুব কষ্টের।’
সম্মুখসমরে রুশ সেনাদের অব্যাহত হামলায় ইউক্রেনীয় সেনারা যে বড় বেকায়দায় পড়েছেন, সেনা কমান্ডার ইহোরের কথায় যেন তারই চিত্র উঠে এল। তাঁর কথায় আরও বোঝা গেল যে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে রুশ সেনাদের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে পেরে উঠছেন না তাঁরা।
ইউক্রেন সেনাদের জন্য বড় এক আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন নতুন রুশ সেনারা। নতুন নিয়োগ পাওয়া এসব সেনার বেশির ভাগই কারাবন্দী ছিলেন। ইউক্রেনীয় সেনাদের তুলনায় তাঁরা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত ও অস্ত্রে সজ্জিত। তাঁদের পেছনে থাকে রুশ সাঁজোয়া বাহিনী।
ইহোর বলেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। রুশরা এখন নিজেরাই ড্রোন তৈরি করছে। শিশুদের খেলনার মতো ড্রোনের ব্যবহার করছে তারা। আমাদের ড্রোন অনেক কম।’ আসছে শীতে সম্মুখসমরে লড়াই করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন ইহোর।